স্বাধীনতার ৫১ বছরে বাংলাদেশের পদার্পণ, দেশকে শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় নিয়ে আসা ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, গ্লোবাল ইনডেক্সসহ নানা খাতে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বিস্ময়। অপ্রতিরুদ্ধ অগ্রযাত্রায় আরোহণের এই অর্জনে দেশের জনগণ আজ গর্বিত। দেশের বিদ্যুৎ খাত ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হল।
বাংলাদেশের শতভাগ বিদ্যুতায়ন:
শতভাগ বিদ্যুতায়নের মাইলফলকে বাংলাদেশ, নতুন আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছে দেশ। উন্নয়নের মহাসড়কে এ যেন বাংলাদেশের বুক চিতিয়ে ওঠা এক বিস্ময়ের গল্প। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একাগ্রতায় চলতি বছরের ২১ মার্চ দেশের বৃহত্তম ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন হয়। এর মাধ্যমেই দেশের শতভাগ জনগণকে বিদ্যুতের আওতায় আনার ঘোষণা করে সরকার। সরকারের অঙ্গীকার ও আওয়ামী লীগের ইশতেহার বাস্তবায়নে আরেকটি মাইলফলক অর্জন করেন দেশের জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার বাতিঘর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ফলে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশই প্রথম শতভাগ বিদ্যুতায়নের দেশ হিসেবে নাম লেখায় বিশ্ব দরবারে। এর আগে ২০২১ সালের মধ্যে শতভাগ বিদ্যুতায়ন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। দেশের প্রত্যন্ত দুর্গম গ্রাম যেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থাও বেশ কঠিন, তেমন গ্রামেও পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ। প্রায় সব ধরনের নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত বহু পরিবার আজ বিদ্যুৎ সংযোগ এর বদৌলতে তাদের জীবনটাকে নতুনভাবে সাজানোর পরিকল্পনা করছে। চারপাশ পানিতে পরিবেষ্টিত বিস্তীর্ণ বিলের মধ্যে বসবাসকারী মানুষের ঘরেও জ্বলছে বিদ্যুতের আলো। শুধু বিলের মধ্যে নয়, দুর্গম পাহাড়ে, বিচ্ছিন্ন সব চরে পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ সংযোগের সুবিধা। এসব এলাকায় কোথাও নদী পারাপার লাইন এবং কোথাও সাগর নদীর তলদেশ দিয়ে টানা হয়েছে সাবমেরিন ক্যাবল। ২০১৬ সালে ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ শীর্ষক কর্মসূচি শুরু হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে দেশের সবার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার এ কর্মসূচি গৃহীত হয়। বাড়ি বাড়ি ভ্যান নিয়ে গিয়ে বিদ্যুৎ-সংযোগ দিতে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড চালু করে আলোর ফেরিওয়ালা’ কর্মসূচি। এভাবে লক্ষ লক্ষ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। সব মিলে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই শতভাগ বিদ্যুতায়ন নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশিত সময়ের মধ্যেই দেশের শতভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ৪ কোটি ২১ লাখের বেশি বিদ্যুৎসংযোগ রয়েছে, যার আওতায় জনগণের শতভাগ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। এক যুগ আগে বিদ্যুৎ গ্রাহকসংখ্যা ছিল ১ কোটি ৮ লাখ। এই মধ্যবর্তী সময়ে ২ কোটি ১৩ লাখ বিদ্যুৎসংযোগ বেড়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ২৭টি থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪৮টিতে। একনজরে দেশের বিদ্যুৎ খাত: দেশে ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ বিদ্যুৎ উত্পাদন ক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ৫১৪ মেগাওয়াটে। এক যুগে দৈনিক ২০ হাজার ৫৭২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উত্পাদন ক্ষমতা বেড়েছে। ১৩ হাজার ২১৩ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন এবং ৬ লাখ ২১ হাজার কিলোমিটারের বিতরণ লাইনের মাধ্যমে দেশ জুড়ে এ বিদ্যুৎসেবা পরিচালিত হচ্ছে।
আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন:
দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটও বদলেছে ইতিবাচক গতিতে। শতভাগ বিদ্যুৎসেবা বাস্তবায়নের পর এ চিত্র যেন এভারেস্টের চূড়ার মতোই ধরা দিয়েছে। যা অত্যন্ত খুশির খবর। এবার জেনে নেওয়া যাক, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কী? মূলত আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হল, একটা রাষ্ট্রের সামাজিক অবস্থার সাথে সেই রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা। অর্থাৎ দেশের আর্থিক ব্যবস্থা, উন্নয়ন এর সাথে সামাজিক জীবন সম্পর্কিত। আর্থ সামাজিক উন্নয়ন হচ্ছে জিডিপি, জীবনমান, শিক্ষার হার এবং শ্রমিকের স্তরের উন্নতি। মানবিক উন্নয়ন সূচকে টেকসই ক্রমোন্নতিসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। বৈষম্য দূর করার মাধ্যমে একটি একীভূত, ন্যায়সঙ্গত ও পক্ষপাতমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপের ফলে ২০২১-২২ অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় এখন ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার। ফলে মাথাপিছু আয় এক বছরের ব্যবধানে ২৩৩ ডলার বেড়েছে। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি গত অর্থবছর শেষে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেড়ে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ২৫ শতাংশে। যেটি ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিল ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ। এছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বাজারে বিশ্ব অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তার মধ্যেও মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) লক্ষ্য ছাড়ানো প্রবৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন অর্থবছরে আরও বড় লক্ষ্য অর্জনেরও আশা করা যাচ্ছে। আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৫ শতাংশে নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপে খুব ভালোভাবেই অর্জন করা সম্ভব হবে বলেও মত দিয়েছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। জিডিপির পাশাপাশি সরকারের পদক্ষেপসমূহের অন্যতম হলো, দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থান, সামাজিক নিরাপত্তা সহজলভ্য এবং সকলের অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা। শেখ হাসিনা সরকারের গত ১০ বছরে নেয়া নানা উদ্যোগ আর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকায় দারিদ্র্য বিমোচন ঘটছে দ্রুত। বিশ্বের সামনে দারিদ্র্য হ্রাসে বাংলাদেশ যে এক অনুকরণীয় অবস্থানে পৌঁছেছে, তার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদান করেছে বহুমাত্রিক সংস্থা বিশ্বব্যাংক। তারা বলছে, বিশ্বের অন্য উন্নয়নশীল দেশের উচিত কীভাবে দারিদ্র্য দূর করতে হয়, তা বাংলাদেশের কাছ থেকে শেখা। টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে দেশটি অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের কাছে অনুকরণীয় হতে পারে। বাংলাদেশের এই 'উন্নয়ন বিস্ময়' জাতিসংঘকেও বিস্মিত করেছে। শুধু কৃষি খাতের আধুনিকীকরণ কিংবা শিল্প-কারখানায় বিনিয়োগই নয়, নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করে কর্মসংস্থানের জায়গাটিকে সম্প্রসারিত করা হলে দারিদ্র্যসীমা তার অবস্থানকে প্রতিনিয়ত অতিক্রম করছে। ফলে বাংলাদেশ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। সরকারের নীতি হচ্ছে সমাজ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ উৎসাহিত করা, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে লিঙ্গ সমতা অর্জন, নারী ও যুবকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান যাতে তারা দেশের মূল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হতে পারে, বয়স্ক, বিধবা ও নির্ভরশীল পিতামাতাদের সম-পরিচর্যা সুবিধা প্রদান, জাতীয়ভাবে পরিবারকেন্দ্রিক নীতি ও কর্মসূচি প্রণয়ন, জ্ঞান ও কর্মদক্ষতাকে রূপকল্প-২০২১ এর মূল চালিকাশক্তি নির্ধারণ, ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পে সকলের, বিশেষ করে নারীদের অবাধ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত, নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত এবং সবক্ষেত্রে লিঙ্গ সমতা আনতে নারী ও পুরুষের কাজে সমমর্যাদা ও সমমজুরি নিশ্চিত করা।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস